কালের কণ্ঠ:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, খুনি মোশতাক ও তার দোসর জিয়াউর রহমান ১৫ আগস্ট হত্যাকাণ্ড চালিয়ে বাংলাদেশে হত্যা, ক্যু, ষড়যন্ত্রের রাজনীতি শুরু করে।
তিনি আজ সংসদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের বেগম ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির এক প্রশ্নের জবাবে আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সমগ্র বাংলাদেশই কয়েদখানায় পরিণত হয়েছিল। আমি ও রেহানা দেশে ফিরে আসতে চাইলে জিয়াউর রহমান বাধা দেয়। রেহানার পাসপোর্টের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে গেলে সময় বর্ধিত করতে লন্ডন হাইকমিশনে পাঠানো হয়, জিয়াউর রহমানের নির্দেশে তা বর্ধিত করা হয়নি। তাকে পাসপোর্টও দেয়া হয়নি। ফলে ১৯৭৫ সাল থেকে ১৯৮১ সাল পর্যন্ত আমাদের বিদেশের মাটিতে পড়ে থাকতে হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশে রাজনীতি ও দল গঠনের সুযোগ দেয়া হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগের সকল নেতা-কর্মীদের কারাগারে বন্দি করে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়। ১৯৭৯ সালে তারা মুক্তি পান। ১৯৮১ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিলে আমার অবর্তমানে আমাকে দলের সভাপতি নির্বাচন করা হয়।
তিনি বলেন, ১৯৮১ সালের ১৭ মে আমি দেশে ফিরে আসি। জিয়াউর রহমান আমাকে বাধা দেয়ার চেষ্টা করে সফল হতে পারেনি। কারণ বাংলাদেশের জনগণ ও আওয়ামী লীগের নিবেদিত কর্মী বাহিনী সকল বাধা উপেক্ষা করে আমাকে দেশে ফিরিয়ে আনেন।
তিনি বলেন, আমি দেশে যখন ফিরে এসে ৩২ নম্বর সড়কের বাড়িতে প্রবেশ করতে যাই, আমাকে সেই বাড়িতে ঢুকতে দেয়া হয়নি। পিতা-মাতা, ভাইদের জন্য একটু দোয়া করার সুযোগও দেয়া হয়নি। পুলিশ পাহারা ও গেটে তালা দিয়ে আমাকে পথ রুদ্ধ করা হয়। আমি রাস্তার ওপরই বসে পড়ি এবং আমাদের নেতা-কর্মীদের নিয়ে মিলাদ ও দোয়া পড়ি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৮১ সালের ১২ জুন পর্যন্ত ওই বাড়িতে আওয়ামী লীগের কোন মানুষকে ঢুকতে দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, ১৯৮১ সালের ১২ জুন হঠাৎ করে ১ ঘণ্টার নোটিশে বাড়িটি আমাকে হস্তান্তর করে। তখন আবদুস সাত্তার অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ছিলেন। ধুলি-ধূসর, বিধ্বস্ত, রক্তের ছোপ ছোপ কালো দাগ ও রক্তমাখা ছড়ানো ছিটানো কাপড়-চোপড়, ছেড়া বালিশ, রক্তমাখা তুলা, দেয়ালের গায়ে ও মেঝেতে গুলির আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত এমনি অবস্থায় ওই বাড়িতে যখন প্রবেশ করতে যাই, আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। একটা কথা আমি এখনও বুঝি না, হঠাৎ বাড়িটা হস্তান্তরে কিসের এত তাড়া ছিল। কিন্তু আমি যখনই সিঁড়ির ধাপের মাঝামাঝি উঠে আসি তখনই আমার নজড়ে পড়ে সিঁড়ির সেই অংশটি যেখানে ঘাতকের আঘাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন আমার বাবা। আমি তা সহ্য করতে পারিনি।
ফজিলাতুন নেসা বাপ্পির অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশের সাধারণ মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর জন্য রাজনীতি করতেন। তার আদর্শ থেকে শিক্ষা নিয়ে আমিও সকল আকাক্সক্ষা ও মোহ ত্যাগ করে দেশের মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। দেশের মানুষ যেন বিশ্ব সভায় তাদের মর্যাদা ফিরে পায়, বিশেষ করে ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে বাঙালি জাতি যে মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছিল, ৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সে মর্যাদা বিনষ্ট হয়। আমি সেই মর্যাদা পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত দেশ প্রতিষ্ঠাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য।
তিনি বলেন, ৭১-এর স্বাধীনতা বিরোধীরাই ৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার পর উল্লসিত হয়েছিল। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করে খুনিদের বিচার রোহিদ করা পৃথিবীর ইতিহাসে এমন দৃষ্টান্ত আর নেই। শুধু তাই নয়, খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়েছিল। যেখানে খুনিদের পুরস্কৃত করা হয়, সেখানে বাধা আসবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমি অন্যায়ের কাছে মাথা নত করি না, মৃত্যুভয়কে পরোয়া করি না। কারণ দেশের মানুষের জন্য আমি কাজ করছি। সততা, আদর্শ ও নিষ্ঠা থাকলে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছা সম্ভব।
পাঠকের মতামত